রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন
আবদুল আউওয়াল:
হজ একটি ফরজ ইবাদত। সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর জীবনে তা একবার আদায় করা কর্তব্য। ইবাদত কবুলের অন্যতম শর্ত হলো বিশুদ্ধ নিয়ত। সুতরাং হজ আদায়ের আগে নিয়ত বিশুদ্ধ করে নেওয়া জরুরি। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে, তার জন্যই দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে।’ সুরা বাইয়্যেনা : ৫
হাদিস শরিফে এসেছে, ‘সব কাজের নির্ভরতা নিয়তের ওপর। কোনো ব্যক্তি নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে।’ সহিহ বোখারি : ১
অর্থাৎ কোনো কাজ করার সময় পরকালীন উদ্দেশ্য তথা আল্লাহ এবং তার রাসুলের আনুগত্য ও সন্তুষ্টির নিয়ত থাকলে সেটা ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে এবং এর যথাযথ প্রতিদান বান্দা আল্লাহর কাছে পাবে। পক্ষান্তরে জাগতিক কোনো উদ্দেশ্যে যথা লোক দেখানো, অহংকার প্রদর্শন কিংবা সুনাম কুড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করলে তা ব্যক্তিগত কাজ হবে, ইবাদত হবে না এবং এর কোনো প্রতিদানও আল্লাহর কাছে পাবে না। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা তোমাদের চেহারা ও সম্পদের দিকে তাকান না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও কাজের দিকে তাকান।’ সহিহ মুসলিম : ৬৭০৮
এখানে অন্তরের দিকে তাকানোর অর্থ হলো নিয়তের প্রতি লক্ষ করা; কেননা নিয়ত হলো কাজের উদ্দেশ্য ও রক্ষক। নিয়ত বিশুদ্ধ হলে কাজ না করেও সওয়াব পাওয়া যায়। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ভালো কাজের পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করতে পারল না, তার জন্যও সওয়াব লেখা হবে।’ সহিহ মুসলিম : ৩৫৪
সুতরাং কথা পরিষ্কার হলো, ইবাদতের জন্য নিয়তের বিশুদ্ধতা প্রয়োজন। সুতরাং হজ করার আগে নিয়ত বিশুদ্ধ করে নেওয়া জরুরি। আর সেই বিশুদ্ধতার নাম হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি। এ ব্যাপারে কোরআন মাজির ঘোষণা হলো, ‘তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই হজ ও ওমরা সম্পন্ন করো।’ সুরা বাকারা : ১৯৭
মহান আল্লাহর জন্য যে হজ হয় তা নিষ্কলুষ ও পাপমুক্ত হয়। এ ধরনের হজ আদায়কারীর বিষয়ে হাদিসে এসেছে, ‘সে হজ থেকে সদ্যপ্রসূত শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে বাড়িতে ফিরে।’ সহিহ বোখারি : ১৫২১
হাদিসের পরিভাষায় এ ধরনের হজকে ‘হজে মাবরুর’ বা কবুল হজ বলে। এর বিনিময় একমাত্র জান্নাত। সহিহ বোখারি : ১৭৭৩
বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম কবুল হজের কিছু আলামত উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন, ‘হজ কবুল হলে পরবর্তী সময়ে ইমান ও আমলে দৃঢ়তা সৃষ্টি হয়। দুনিয়ার প্রতি অনীহা ও আখেরাতের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। ব্যক্তি তার পূর্বের অপরাধ সম্পূর্ণরূপে ছেড়ে দেয়। অতীতের বেআমল জিন্দেগির জন্য অনুতাপ করে। আমল বেশি করলেও কম মনে করে। অহংকার ও বড়ত্ববোধ ছেড়ে নিজেকে ছোট মনে করে। এক কথায়, ব্যাপক উন্নতি ঘটে ব্যক্তির আমল ও আখলাকে। পক্ষান্তরে হজ কবুল না হলে উল্টোচিত্র দেখা যায়। ব্যক্তির আমল ও আখলাকেরও অবনতি ঘটে।’
হজ কবুল না হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে। কারও নিয়তে গন্ডগোল, কারও সম্পদে ভেজাল। কারও হজ আদায়ের পদ্ধতিতে সমস্যা। আবার অনেকে হজে গিয়েও নানারকম পাপে জড়িয়ে যায়। যার ফলে হজ কবুল হয় না। আজকাল অনেক পাপকে আমরা পাপই মনে করি না। স্মার্টফোনে সেলফি উঠানো স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বিশেষ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করাই লাগে। হজের মতো পবিত্র ইবাদতেও এ কাজগুলো করে চলি। অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফটো বা ভিডিও আপলোড করে মানুষের বাহবা কুড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। হজের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সঠিকভাবে আদায় না করে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম কিংবা ইউটিউবে হজের লাইভ দেওয়া আরম্ভ করি। এসব কি পাপ নয়? এগুলো কি হজের পবিত্রতা নষ্ট করে না? এভাবেই নানা রকমের শরিয়ত নিষিদ্ধ কাজ করে আমরা নিজেদের হজগুলোকে নষ্ট করি। তাই একজন হজ আদায়কারীর এসব বিষয়ে খুবই সংযত ও সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সূত্র: দেশরূপান্তর।
ভয়েস/আআ